আজ ২ এপ্রিল শনিবার, ৯ম বিশ্ব অটিজম
সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন
নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২
এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮ সাল থেকে
বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘অটিজম লক্ষ্য
২০৩০ : স্নায়ু বিকাশের ভিন্নতার একীভূত সমাধান’। দিবসটি উপলক্ষে
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আলোচনা ও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশে ৯ম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৬-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে
আনছে। প্রতিবন্ধীরা এখন ক্রিকেটসহ নানা খেলায় চ্যম্পিয়ন হয়ে আসছে। একসময় মানুষের
কাছে তাদের হেয় হতে হতো। এখন সেই সুযোগ নেই। তাদের জন্য আমরা সেরকম পরিবেশ করে
দিব। মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে তারাও অনেক কিছু সমাজকে দিতে পারবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি
প্রতিবন্ধীদের বানানো ছবি দিয়ে কার্ড দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। এদের মধ্যে যে
সুপ্ত মেধা আছে তা বিকশিত করার সুযোগ করে দিচ্ছি। শুধু সরকারি প্রচেষ্টা নয় বরং
বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এসব কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু
একাডেমি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্নায়বিক প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্তদের অংশগ্রহণে আলোচনা ও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ
শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী
দিয়েছেন।
৯ম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অটিস্টিক ব্যক্তিদের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে
আসার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অটিস্টিক
ব্যক্তিদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বিত্তবান ও
সচেতন ব্যক্তিবর্গসহ সকলেরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া খুবই জরুরি। তৃণমূল পর্যায়ে
অটিস্টিক ব্যক্তিদের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।
আবদুল হামিদ বলেন, অটিস্টিক শিশুরা আমাদেরই
প্রিয় সন্তান। ভালোবাসা ও সেবা দিয়ে তাদের লালন পালনের পাশাপাশি কর্মদক্ষ করে
তোলার জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। কারণ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণই অটিস্টিক
শিশুকে কর্মদক্ষ করে তোলে। যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার।
অটিস্টিক ব্যক্তিদের সার্বিক উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের উদ্যোগ
গ্রহণ করেছে। তিনি দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে
সরকারের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সকলকে
প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস
করেন অটিস্টিক শিশু কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে পরিবারের স্নেহ, ভালবাসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা হলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য
বোঝা না হয়ে অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্যের
অধিকারী এ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বিগত ৭ বছরে আমরা ব্যাপক
কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।’ ‘আমরা
প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান, সরকারি চাকুরিতে
কোটা সংরক্ষণ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, প্রতিটি
জেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করেছি।
আমরা অটিস্টিক ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছি।’ অটিস্টিক শিশুর শনাক্তকরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সিনাক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
এক সময় অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক ধারণা ছিল।
বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণের ফলে অটিস্টিক শিশু ও প্রতিবন্ধীদের
প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ
পরিষদে ‘অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য
আর্থ-সামাজিক সহায়তা’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এ
প্রস্তাব উপস্থাপনকারী গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিসিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ-এর জাতীয়
উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা হোসেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’-এ
ভূষিত হয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের
সকল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, অটিস্টিক শিশু কিশোর, তাদের পরিবার ও পরিচর্যাকারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং ৯ম
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৬ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা
করেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম
সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিজম আক্রান্ত
এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিস্টিক।
দিদারুল ইকবাল
চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment