“শিশু গড়বে নতুন দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ”
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়, থাকবে শিশু সুরক্ষায়”। এ প্রতিপাদ্য ও শ্লোগানকে সামনে
রেখে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় শিশু
দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন।
দিবসটি পালনের জন্য সরকারিভাবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক
মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। ১৭ মার্চ, স্বাধীন বাংলাদেশের
স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী। একই সঙ্গে সরকারিভাবে
দিবসটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ শিশুদের সুন্দর
ভবিষ্যৎ এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ
করার আহবান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের সকল শিশু-কিশোরকে তিনি আন্তরিক
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন,
শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত এবং তাদেঁর আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে দল-মত
নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রিয় বাংলাদেশকে
শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। শিশুদের মনে দেশপ্রেম
জাগ্রত করে তাদেঁর ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে
তুলতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিবস
উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং জাতীয় শিশু দিবসে
দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও শিশুদের নিয়ে নানা আয়োজনে
পালন করা হয় দিবসটি।
দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলা সদরে
শিশু সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, গ্রন্থমেলা,
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে টেলিভিশন ও বেতারসহ
গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়।
১৭ মার্চ ২০১৬ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে
ফাতেহাপাঠসহ বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
পরে তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে
গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু
দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভায় প্রধান
অতিথির বক্তব্য দেন। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া একই
স্থানে বইমেলার উদ্বোধন ও সেলাইমেশিন বিতরণ করেন তিনি।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রাষ্ট্রপতি ও
প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘীরে বঙ্গবন্ধুর
সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে কি ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে তা জানতে আমরা
সেখানে কথা বলেছি বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক শামীম আহমেদ-এর সাথে।
এছাড়া চীন বেতারকে বিশেষ সাক্ষাৎকার
দিয়েছেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: জয়নাল আবেদীন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)
মো: শহীদুল ইসলাম চৌধুরী। দিবসটি উপলক্ষে আমরা আরো কথা বলেছি শিশু কিশোরদের সাথে। শিশুদের
মধ্যে বলেছে, ফাহমিদা আক্তার সাঈমা, ফাহমিদা আক্তার, সানিয়া আফরিন জিতু, সুপ্রিয়া,
সাদিয়া আফরিন তামান্না, নুসরাত জাহান নিঝুম, ঝুমা, হুমাইয়া জান্নাত রিমা, নাদিয়া
আক্তার, ইসরাত জাহান আনিকা, নাদিয়া ইসলাম, মোনালিসা মন্নান প্রমূখ।
উল্লেখ্য, শিশু দিবস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন
সময় পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শিশুদের সম্মান করতে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। শিশু
দিবসটি প্রথমবার পালন করা হয়েছিল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে। সারা বিশ্বে
“বিশ্ব শিশু দিবস” পালন করা হয় ২০ নভেম্বর এবং “আন্তর্জাতিক শিশু দিবস” পালন করা
হয় ১ জুন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ চৈত্র বঙ্গাব্দ এবং ১৭ মার্চ খ্রিস্টা্ব্দে
দিবসটি উদযাপন করে। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে
শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে ১৭ মার্চ প্রথম
বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়।
বলাবাহুল্য, ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায়
সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও
মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন
তৃতীয়। কিশোর বয়সেই শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে
তৎকালীন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে তাকেঁ প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে
কারাবরণ করতে হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী জীবন। বঙ্গবন্ধুর গভীর রাজনৈতিক
প্রজ্ঞা, আত্নত্যাগের কারণে পরবর্তিতে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা,
মুক্তিযুদ্ধের পথ প্রদর্শক। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার
হিসেবে। বিবিসি’র এক জরিপে তিনি নির্বাচিত হন ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’।
আজকের শিশুরাই আগামীর সক্ষম নাগরিক। তাই
শিশু-কিশোরদের চারিত্রিক দৃঢ়তার পাশা-পাশি তাদেঁর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত
হোক এ বছরের শিশু দিবসের প্রত্যয়। জয় হোক সকল শিশুর।
দিদারুল ইকবাল
চীন আন্তর্জাতিক বেতার
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment